কমলাপুর রেলস্টেশন। রাত আটটা বা নয়টা। সময় দেখার সময় ছিল না। মন ছিল পুরোপুরি বিক্ষিপ্ত। সাড়ে চার বছরের ফুলবাগান এক ঝড়ে ভেঙ্গে গেলে যতটা বিষ্ময় কাজ করার কথা তার চেয়েও বেশি বিষ্মিত ছিল ছেলেটা। সময়ের দিকে খেয়াল করার অবকাশ পায় নি সে।
প্রেমে পড়লে মানুষ পাগল হয়। প্রেম চলাকালীন মানুষ পাগল হয়। সবাই বলে। ছেলেটা বিশ্বাস করত। কারণ নিজেকে সে পাগল হিসেবেই দেখেছে। মেয়েটার প্রেমে পড়ার পর পাগল ছিল সে। প্রেম চলাকালীন পাগল ছিল সে। লোকে আরো বলত প্রেম ভেঙ্গে গেলে মানুষ পাগল হয়। ভয়ানক পাগল। ছেলেটা ঠিক বিশ্বাস করতে চাইত না। বলত ও কখনো ছেড়ে যাবে না। ঠিকই একটা না একটা কারণ খুঁজে নিয়ে পাশে থেকে যাবে। ঠিক যেমন থেকেছে সাড়ে চার বছর। সবাই না হাসলেও কেউ কেউ হাসত। হাসত মেয়েটাও, পরে জানা গেছে যদিও। ছেলেটার এহেন পাগলামী দেখে মেয়েটাও হাসত খুব। আর বলত কখনো ছেড়ে যাবে না। বিশ্বাস পাকাপোক্ত হতে থাকে। আরো একটু শান্তি লাগতে থাকে হৃদয়ে। শরতের আকাশে মেঘের সাথে ওড়ে কিছু সুখ। ছেলে মেয়ে দুটো যেন শরতের কাশফুল হয়ে যায় ক্রমশ।
একদিন হঠাৎ আসে মেসেজটা। সব কিছু শেষ। গত এক বছর ধরে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে মেয়েটা। ছেলেটাকে গুছিয়ে নিতে বলে। ভাল থাকতে বলে। ছেলেটার বিষ্ষয় কাটে না। কাটতে চায় না। আগেও এমন মেসেজ এসেছে সব শেষ বলে। এমন কখনো লাগে নি। আজ যেন কিছু একটা বিষাদ লেগে আছে মেসেজে। পাগল হয়ে যায় ছেলেটা। ফোনের পর ফোন,,,,,,,,
কোন সাড়া নেই।
সাড়া আর থাকবে না এটা বুঝতে পারলে ছেলেটারই উপকার হত। নিজেকে শান্ত করতে পারত। সব কিছু কি আর মেসেজের লেখার মত সহজ হয়? হয় না। ছেলেটা দিশাহারা হয়ে ছুটতে থাকে। কোথায় যাবে জানে না। চলতে চলতে গিয়ে উঠল এক প্লাটফর্মে। না, নামল এক প্লাটফর্ম থেকে। নিচে, রেললাইনের ওপর। ট্রেন আসবে। প্রতারিত হবার চেয়ে মরা ভাল এই ফালতু যুক্তিই তখন তার কাছে ষোনার খনি।
কার জীবনে কখন কী ঘটে কে বলতে পারে। ট্রেনটা চলে যায়। গাইবান্ধার কোন এক পাগল তাকে বাঁচিয়ে দেয় আজকের এই লেখা লেখার জন্যে।
মেয়েটা সুখে আছে। ভাল আছে। থাকার কথা। ছেলেটা ভাল আছে। সুখে নেই। দুঃখেও নেই। শরতের আকাশে আছে। কাশফুলে আছে। শহিদ মিনারের ওয়ালে আছে। :-)
No comments:
Post a Comment