অটো থামান!
অটোওয়ালা ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে গেল যেন। বাম পাশে কর্পোরেশনের বেড়া। ডানপাশে পুকুর। এমন জায়গায় কেউ নামতে চায় না কখনো। তাছাড়া এমন কড়া সুরে তো কখনোই না। সুরটা কড়া কি ঠিক? নাকি আরো একটু অন্য রকম। তীব্র বিবমিষা আর বিরক্তিভরা সুর। অটো থেমে গেল।
মুখের দিকে না তাকিয়েই পাঁচ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিল প্রমিথিউস। আর শান্ত গলায় তীব্রভাবে বলল মানুষকে অমানুষ ভাবা সত্যিকারের অমানুষদের সাহচর্য আমার সবচেয়ে অপছন্দের।
অটোওয়ালা আবারও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। বুঝে উঠতে পারল না কিছু। বোঝেই বা ক'জন! প্রমিথিউসের কথা নাকি তার বাড়ির লোকজন বোঝে না, বন্ধুরা বোঝে না, ক্লাসের লেকচারার বোঝে না। এমনকি ল্যাবের মামারাও বোঝে না। প্রমিথিউসেরও মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় নিজের প্রকাশভঙ্গীর অব্যক্ততা নিয়ে। তবে সে কজনে লাগায় সামান্যই। চলছে এভাবেই।
মনে মনে প্রমিত ক্ষেপে আছে ভয়ানক। চোখের শিরা টানটান হয়ে আছে। অটো চলে যাবার পারপরই সে উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে। খানিকটা গিয়েই কর্পোরেশনের বেড়ার ফাকা দিয়ে বেড়িবাঁধের ওপরে একটা সিঁড়ি উঠে গেছে। সেটা বেয়ে উঠে যায় সে। বাতাস এসে লাগে তার গায়; পদ্মার বাতাস। হাজার বছর আগে বেহুলা, চাঁদ সওদাগর এমনই বতাস পেত হয়তো। মনটা একটু শান্ত হয়। ধীরে ধীরে প্রমিত নেমে যায় পদ্মার চরে।
সন্ধ্যা নেমেছে মাত্র। ভাদ্র মাসে মাঝামাঝি সময়ে আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘ। তারই কয়েকটা ছায়া মাথার ওপর দিয়ে দিগন্তের দিকে ক্রমশ সরে যাচ্ছে। মনটা শান্ত হয়ে যাচ্ছে। হওয়া দরকারও বটে। আজও বই কেনা হল না। অথচ আজ তো মন ঠিক করেই বেরিয়েছিল সে; বই কিনবেই। ছয় মাস হঢে গেছে বই না কিনে আর কতদিন থাকা যায়। সামনে আবার ক্লাসটেস্টের ঝামেলা আছে। ঝামেলাই তো! পড়ালেখার চেয়ে ঝামেলার কিছু আছে পৃথিবীতে?
No comments:
Post a Comment