9/9/15

কোন একদিন

সময়টা বড্ড খারাপ যাচ্ছে শিমুলের। একে তো মস্তিস্কের স্মৃতিরক্ষার লোবের এক চতুর্থাংশ অক্ষম হয়ে গেছে গত পরশু সন্ধ্যায়, আজ ঠিক এই সময়টাতেই তার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল খুলে পড়ে গেল!

হাতটা স্টেইনলেস স্টিলের সাথে কার্বন ফাইবারের সূক্ষ সংকরে তৈরি পদার্থ দিয়ে বানিয়ে দিয়েছিলাম গত মাসে। কাহিনীটা অবাস্তব ঠেকলেও সত্যি।

আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে নিয়ম মাফিক হাঁটতে বেরিয়েছিলাম ছোট্ট শহর সলসমারসির ইলেক্ট্রনিক্স সিঙ্গেল ট্রাক রাস্তা তে। রাস্তাটা বানানো হয়েছিল মূলত পথচারীদের শ্রম কমিয়ে সময় সাশ্রয় করাতে। শাটল ট্রেন বা বাসের মতই এটি কাজ করত। পাঁচশ মিটার পরপর জেনোপ্লেস আছে রাস্তাটার যেখান থেকে রাস্তায় ওঠা যায় এবং রাস্তা চলতে থাকে। গতিবেগ মানুষের হাঁটার স্বাভাবিক গতির দ্বিগুন।
কিন্তু ক্রমে বিদ্যুতের ঘাটতিতে অফ করে দেওয়া হয় রাস্তাটা।
এখন এই রাস্তায় সবাই মর্নিং ওয়াক করে।

তো শিমুলের কথায় ফেরা যাক। পাঁচ বছর আগের সেই দিনটা আমার স্পষ্ট মনে আছে 2051 সালের ১০ জানুয়ারি। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর চরম প্রভাবে শীত তখন নেই বললেই চলে। হাঁটছি আর আমার হাতে থাকা একটা প্রোজেক্ট নিয়ে ভাবছি, কি করে মানব মস্তিস্কের স্মৃতিধারন কে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায় অসীম পর্যন্ত।

হঠাত্‍ একটা মোড় নিতেই দেখি সোলার ডাস্টবিনের পাশে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর নিথর দেহ।
দৃত তুলে নিলাম কোলে, হ্যাঁ বেঁচে আছে। বিষ্মিত হলাম চল্লিশ বছর আগের মত আজও এমন কান্ড ঘটে!
যা হোক প্রথমে কল করতেই একটা ডেস্কো এলো যা এম্বুলেন্সের মতোই তবে চালক বিহীন। রোগীকে উঠিয়েই নির্দেশকে চাপ দিলাম হোম অফ প্রফেসর শঙ্কু।
ব্যস কয়েক মিনিটেই পৌছে গেলাম বাড়িতে।

এরপর চিকিত্‍সার দায়িত্ব দিলাম রোবট মায়ানথাল এর কাছে। ও চার দিনেই মোটামুটি সুস্থ করে দিল বাচ্চাটাকে। বাচ্চাটার মাথায় সামান্য কয়েকটা লাল চুল ছিল তাই শিমুল নাম রাখা হল। এরপর প্রথা অনুযায়ী সাধারন নাগরিকদের মতো ওকেও সেমি রোবটে পরিনত করার সময় এসে গেল। আমি ওর যাবতীয় প্রোগ্রাম করে দিলাম একটা মাইক্রো চিপে এবং তা ছোট্ট অপারেশন করে ওর দেহে ঢুকিয়ে দেওয়া গেল। এরপর আমার প্রোজেক্টের পরীক্ষা ওর ওপরেই খাটালাম।
প্রোগ্রাম করার সময় একটা বিশেষ পরিসংখ্যান তত্ব ওর চিপে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম যাতে ও অতি দ্রুত হিসাব করতে পারে এবং তা সংরক্ষন করতে পারে।
শহরের পাঁচ হাজার জনসংখ্যার ফুল ডাটা আমি ওর ব্রেইনে প্রবেশ করিয়ে দিলাম।

এভাবে চলল ওর ওপরে গবেষণা প্রায় পাঁচ বছর এবং গত পরশু ও নিজে নিজে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ডাটা বিন্যস্ত করতে গিয়ে স্মৃতি মস্তিস্কের এক চতুর্থাংশ অকেজো করে ফেলে আর আজ তা বুঝতে পেরে বেচারা রেগে মেঝেতে কার্বনেডোর পাতে ঘুষি মারতেই আঙ্গুলটা ভেঙ্গে ফেলে।

আমি চিন্তা করছি এবার আরো স্থিতিস্থাপক কিছু দিয়ে ওর আঙুল বানিয়ে দেব।

No comments:

Post a Comment