9/23/15

আমারও যে একলা লাগে

টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে। টিনের চাল, শব্দ তাই অসাধারণ শ্রুতিমধুর।

এই সব দিনে ভাল লাগা গুলোও খারাপ লাগা হয়ে যায়। মনে পড়তে থাকে একগাদা ভিজে স্মৃতি। যন্ত্রণা বাজতে থাকে কানে। রোমান্টিসিজম ভাজতে গিয়ে মন বেচারা হাওয়ায় ওড়ে; আনন্দের নয়, আবেগে কেঁদে ফেলা ঝড়ো হাওয়ায়। তুফান বৃষ্টিতে পাখি যেমন চুপচাপ বসে থাকে, মন খারাপের ব্যক্তিগত অধিকারীটিও চার চালা টিনের চালের নিচে ধুম মেরে পড়ে থাকে। মাঝে মাঝে বই উল্টায়, পছন্দের-অপছন্দের, প্রিয় মানুষের পছন্দের, কোথাও হঠাৎ শোনা ভাল বইটি। পড়া না হলেও এই সব দিনে বই জড়িয়ে কেঁদেকেটে পড়ে থাকা যায়। আসলে থাকতে হয়। উপায় কী!

পৃথিবীতে ভাল থাকার ওষুধ গুলো ক্রমে জীবন বাঁচানোর ওষুধে পরিণত হয়। সময়ের সাথে, ভালবাসার সাথে, ভালবাসা পাবার সাথে। বোঝা যায় ভালবাসা হারানোর সাথে, ভালবাসা বেড়ে যাবার সাথে। পরিমাপ করা না গেলেও ভালবাসা বেড়ে যাওয়া বোঝা যায় ক্রমশ কষ্টে নীল হয়ে যাবার সাথে। মিথ্যের দুনিয়ায় সত্যকে সত্য বলার মত সাহস হারানোর সাথে।

পণ করে ভাঙ্গা আমাদের আদিম অভ্যাস। নিয়মের বাইরে যাওয়া পৌরাণিক থেকে চলে আসছে। আদম ইভের পরে হাজার রাত-দিন-মাস-বছর মানুষ নিয়মের বাইরে গেছে, যাচ্ছে। কিছু নিয়ম আবার নিয়মের মাধ্যমে তৈরি হয় নি, তারা কেবল অনিয়ম অথচ নিয়ম!

বৃষ্টি থামছে না। বছর খানেক আগে এই সব দিনে মন খারাপ হত, ভয়ানক মন খারাপ। একা লাগত খুব। থাকতাম একা। বই পেলেই পড়ে ফেলতাম। আবার সেসবের পূনরাবৃত্তি হচ্ছে। আটকাতে পারছি না। অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়াটা নাকি উত্তম কাজ। মাঝে মাঝে আফসোস লাগে আমি কখনো উত্তম হতে পারলাম না কেন! তাহলে অন্তত বৃষ্টির পথে মন খারাপ উড়িয়ে নিজেও সুখে থাকতাম। এমন ঝরঝর দিনে ক'দিন মন খারাপ করে থাকা ঠিক?

একজন অপরিচিতের কথা মনে পড়ছে। একটা বাস জার্নি। তার প্রেম কাহিনী বলে আমাকে অপরিচিতের গন্ডিতে পরিচিত বানিয়ে রেখে দিয়েছে। ফোন নাম্বার দিয়ে বলেছিল কথা বলতে, উইশ করতে। হারিয়ে ফেলেছি। তার জন্যে খারাপ লাগে। কথা রাখতে পারিনি।

একটা রেল লাইনের কথা মনে পড়ে, সেখানে কোন পাখি নেই। কাক ছাড়া। সবাই বলত। অথচ আমি জানি কাক একটা পাখিই। সবাই কাককে কাক বলে কেন? পাখি বললে কি অন্য পাখিদের জাত চলে যায়? কই তারা তো কখনো অভিযোগ করে নি! মানুষ কেন তাদের আলাদা করতে চায়? পাখিরা কথা বলতে পারে না বলে মানুষের অনেক সুবিধা। নিশ্চয়ই কাকেরা নালিশ করত আমার কাছে, ফুলের কাছে, গাছের কাছে, ইট-কাঠ-পাথরের কাছে।

রেল লাইনটা উঁচু, আর লম্বা। দুটো পাত চলে গেছে দিগন্তে। কাছে থেকেও কত দূরে তারা; তারা থেকে তারাদের দুরত্বও বুঝি অত না। সারা জীবন পাশে থাকা কাউকে ছুয়ে দেকতে না পারার দুঃখ কতটা? কথা বলতে পারলে রেল লাইন বলে দিত। আমি মাঝে মাঝে বুঝি। বৃষ্টির সময় বেশি বুঝি। ঠিক এখন। হয়তো দিগন্তে ছুয়ে দেখা যায়। কিন্তু সে দেখা কেবলই ঝাপসা।

ফিরে ফিরে আসা আমাদের ধর্ম। কারণ আমরা না মানি নিয়ম, না মানি পণ করা কথা।
বৃষ্টিও ফিরে ফিরে আসে। ফিরে আসে না যার আসার কথা। ফিরে আসে না যে কথা দেয়। ফিরে আসে না যে ভালবাসে। ফিরে আসে না যে স্বপ্ন দেখায়। ফিরে আসে তখন যখন আবার চলে যাবার সময় হয়; উল্টেপাল্টে দিতে হয় জীবন তখন। এবং আবারও ফিরে যায় সে। তারপর আবার একরাশ স্মৃতি, বৃষ্টি, কাক, বই, রেল লাইন,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

No comments:

Post a Comment