7/30/16

দৌড়াও, আমি হাঁটি

ঠিক ততটুকু বৃষ্টি নামুক
যতটুকু জল জমলে রাস্তায় তোমার খালি পায়ের
কেবল পাতাটা ভেজে।

ততটুকু মেঘ ঝরুক
যতটুকু মেঘ ঝরলে রাস্তায় তোমার প্রতিচ্ছবি দেখার মত জল জমে।

ততটুকু বাতাস বয়ে যাক
যেটুকু ছাড়া আমার সাধ্য নেই তোমার ওড়না খানি এক ফুঁয়ে ওড়ানোর।

ততটুকু কাঙ্গাল হই যেন
যতটুকু কাঙ্গালিপনায় তোমার ঠোঁট এগিয়ে আসে।

ঠিক ততটুকু জোরে দৌড়াও
তুমি প্যারিস রোডে
যতটুকু জোরে দৌড়ালে আমি হেঁটে হেঁটে তোমার গায়ের ঘ্রাণ নিতে পারি।
ততটুকু জোরে দৌড়াও
যতটুকু জোরে দৌড়ালে পাঁচশ মিটার রাস্তা পার হতে তোমার পাঁচ কোটি বছর সময় লাগে;
তোমার গায়ের ঘ্রাণ নিতে পাঁচ কোটি বছরও বড্ড কম সময়।

©ছবিঃ ফেসবুক থেকে নেওয়া

7/27/16

শেষ ভোরের হিসেব

ছোটঘরের খড়খড়ে মাটি দেওয়ালে
চাপাপড়া দীর্ঘশ্বাস দেখেছ?
দেখনি।
কাশফুলের শুভ্রতায়ও যে অশ্রু থাকে,
স্বচ্ছ সে অশ্রু ছুঁয়েছো?

না।

আমাকে আমার সাথে তুলনা করে
তোমার মনে এঁকেছো?

না।

তোমাকে তো রেখেছি ঠিকই পাখি
ডাকা ভোরে।
আর
ছোট নদীর হাঁটা পথে যেতে যেতে
হাঁটু জলের 'পরে।

7/23/16

একটা ডায়েরির পাতা

১৪ মার্চ ২১৫০
গতকাল একটা চিঠি পাওয়া গেছে মহাকাশ থেকে।
হুবহু তুলে দেওয়া হল।

"হাতে বেশি সময় নেই। মৃত্যু আগতপ্রায়। তাই এই চিঠিটা লিখে যাচ্ছি। কালের গর্ভে হারিয়ে না গেলে কেউ হয়তো পাবে।

আমরা রওয়ানা হয়েছি আজ দেড়মাস হল। এই বছরের মে মাসের কাঠফাটা এক রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে সাইত্রিশ টা পরিবারের মোট দুইশত জন সদস্য আর ষোলজন বিজ্ঞানী st5297 এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই। আমরা যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে আসি, মাত্র পয়তাল্লিশ কোটি লোকের বসবাস ছিল সেখানে। এই দেড় মাসে তা বোধহয় আরো কমে গেছে কয়েক কোটি। খরা, মহামারি আর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত পারমানবিক অস্ত্রের পরবর্তী প্রভাবে আজ সুজলা পৃথিবী ধ্বংসের মুখে।

মানব ইতিহাস আর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য গতবছর অর্থাত্‍ 2099 সালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাংলাদেশ এস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির(BAS) তত্ত্বাবধানে মোট সাড়ে সতের হাজার মানুষ কে নতুন আবিস্কৃত মনুষ্য বসবাস যোগ্য গ্রহ  st5297 তে স্থানান্তর করে নতুন সভ্যতা গড়ে তোলা হবে।

যা সিদ্ধান্ত তাই কাজে রুপ দিতে লেগে যাওয়া হল BAS এর তিন হাজার দক্ষ কর্মী আর শ চারেক রোবট নিয়ে।
ছয় মাসের প্রোজেক্ট। চারটা মহাকাশযান বানাতে হবে যারা প্রত্যেকে মোট ষাট জন যাত্রী বহন করতে পারবে এবং পৃথক ভাবে পৃথিবী থেকে ছেড়ে গেলেও যাতে মহাশূন্যে গিয়ে পরস্পর জোড়া লেগে একসাথে চলতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা হবে।

ছয় মাস যাবার পূর্বেই সব তৈরি করা গেল এবং বেশ কিছু ক্লোনিং সিস্টেম বসানো হল যান গুলোতে যা মাংসের যোগান দেবে এবং অক্সিজেনের জন্য প্রফেসর এস পি এর উদ্ভাবিত এক প্রজাতির উদ্ভিদ রাখা হল যারা সহজেই অক্সিজেন তৈরি করতে পারে। যানে মনুষ্য কর্তৃক নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড কেও বিয়োজিত করে যাতে অক্সিজেন পাওয়া যায় তারও ডিভাইস বসানো হল।

আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই 2100 সাল। BAS সিদ্ধান্ত নিল আগামী বছরের মে তেই লোক পাঠানো হবে। সব রেডি এবার যাদের কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল মহাশূন্যে পাঠানোর জন্য তাদের থেকে সাইত্রিশ টা পরিবারের মোট দুইশত সদস্যকে নির্বাচন করা হল।

সব ঠিকঠাক হওয়ার পর চারটি যানে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র, বিরাট সব যন্ত্রপাতি, নিউক্লিও ব্যাটারি, সৌর প্যানেল, ওজোন থেকে অক্সিজেন ও বিদ্যুত্‍ তৈরির মেশিনপত্র, খাবার দাবার তোলা হল। এরপর মানুষ। অতঃপর আমরা রওয়ানা হলাম।

st5297 তে পৌছাতে লাগবে দুমাস। দেড়মাস অতিবাহিত হয়েছে। রওয়ানা দেবার একদিন পরেই আমাদের চার যান মিলে যায় এবং মোট দুইশত সতের জন মানুষ একত্রিত হই।

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে দু সপ্তাহ পরই নতুন গ্রহে পৌছতে পারব।

এক সপ্তাহ পরঃ
সম্পূর্ণ অচেনা আর মহাকাশ যান হতে বিচ্ছিন্ন এক টুকরো ফাইবার গ্লাসের কেসিং এ নিজেকে আবিস্কার করলাম । বাকিরা কোথায় ঠিক বুঝতে পারছি না।
তবে বুঝতে পারছি আর সময় নেই। ভাল থেক পৃথিবী।

প্রফেসর ডব্লিউ
স্থানঃ অচেনা ঘোলাটে
বোধহয় ওজোন গ্রহের কাছাকাছি।"

7/20/16

গোঁড়ামি ও হুমায়ুন আহমেদের শঙ্খনীল কারাগার

মৌলবাদ কি কেবল ধর্মের গোঁড়ামিতেই সীমাবদ্ধ একটা টার্ম?
নাকি যেকোন কিছুই মৌলবাদের সংজ্ঞায় পড়তে পারে অতি গোঁড়ামির কারণে?

অনেক চেষ্টা করেও আগে কখনো হুমায়ুন আহমেদের কোন বই পড়তে পারিনি, পড়ার তাগিদও অনুভব করিনি। হতে পারে এটা কেবলই বাজে একটা মানসিকতা, হতে পারে সবাই হুমায়ুন কে নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের বাড়াবাড়ি করে বলেই আমার অহংকারী মনের এই এড়িয়ে যাওয়া গল্পের জাদুকরকে।

মেসের প্রিয় বড়দা তীর্থদার একটা কথা সারাজীবন মনে থাকবে। কোন কাজ তা ভালই হোক বা খারাপ; কোন দিনই তা করতে না চাওয়ার জন্যে একরোখা হয়ে থাকাটিই এক ধরণের গোঁড়ামি। তো হুমায়ুন আহমেদের বই না পড়তে পারা বা পড়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা হয়ত কেবল আমার অপরিণত মস্তিষ্কজাত বহু গোঁড়ামির মাঝে একটা বইকি?

এ তো গেল অন্যের দৃষ্টিতে আমার কথা, আমার নিজেরও কিছু বলার আছে এই ব্যাপারে।

সুনীল গাঙ্গুলি মারা যাবার পরপরই আমি কেমন দিশেহারা হয়ে যাই, ঠিক দিনাজপুরের রায়হান ভাইয়ের মত অতটা না হলেও বেশ খানিকটা। তখন আমার চলছে সুনীলের কাকাবাবু ও সন্তুুর পাঁচ নম্বর খন্ডটা। আমি আর এগোতে পারিনি। রেখে দিয়েছি ছয় নম্বর খন্ডটা। প্রিয় বই আর আসবে না জেনে কিছু বছর বা হয়ত কয়েক দশক পর বইটা পড়ে মনকে প্রতারিত করতে পারব মিথ্যে প্রলোভনে যে সুনীল মরে নি; এইযে তার নতুন বই!

হুমায়ুন সম্পর্কেও আমি বেশ খানিকটা এমন চিন্তা করতে শুরু করলাম বোধহয় তাঁর মৃত্যুর পরপরই। আগে পাঠ্য বইয়ে কিছু গল্প আর কলেজের লাইব্রেরিতে পিঁপড়া নামে একটা গল্প পড়েছিলাম। পরে আর কিছুই পড়া হয়নি। আর একটা ব্যাপার আমার খুব মনে লাগত, বন্ধু রাহীর স্ট্যাটাসেও ব্যাপারটা লিখতে দেখলাম, একটা প্রজন্ম আছে তারা ভাবেই হুমায়ুন ছাড়া বাংলার আকাশে আর কোন লেখক-নক্ষত্র কেন, তারাও নেই। সত্যিই এই প্রজন্মের জন্যেও আমার হুমায়ুন বিমুখতার আসলে না পড়তে চাওয়ার মানসিকতা তৈরির কাঠখড় যুগেছে বেশ কিছু।

একটা সত্যি আমি মনে প্রাণে লালন করি, ভন্ডামিও হতে পারে তবে সত্যিই ব্যাপারটা আমার মনে বেশ নাড়া দেয় ভবিষ্যতে নতুন করে ভাবতে পারব হয়ত আর আরেকটু বেশি যে হুমায়ুন, জাফর ইকবাল আর সুনীল আমার কাছে বেশি অধরা থেকেই প্রিয় হয়ে আছে মারাত্মকভাবে। বই পড়া ছাড়াও লেখক প্রিয় হতে পারে এটা হয়ত সেই ভন্ডামিমার্কা কথা, আমি থোড়াই কেয়ার করি কে কী ভাবল। :-)

সংযুক্তিঃ শঙ্খনীল কারাগার আমার পড়া হুমায়ুন আহমেদের প্রথম বই, একটানা পড়ে ফেলি গতকাল বিকেলে। ছাদে বসে, বৃষ্টি হচ্ছিল। মন্টু চরিত্র বর্নিত আছে সামান্য অথচ সেই আমার মনে জায়গা নিল অন্য অনেককে ছাপিয়ে। ভাল থাকুন হুমায়ুন আহমেদ। আপনার ধর্মে পরজনমের কথা হারাম হলেও রাবেয়া আপার মুখ দিয়ে বলিয়েছেন সে বারবার জন্মেও যেন মন্টুর বাবাকেই তার বাবা হিসেবে পান; হয়ত এ কেবল আত্মীয়তার কোমল আর প্রচ্ছন্ন সান্যিধ্যের প্রবল আকাঙ্খারই বহিঃপ্রকাশ ছিল। :-)

7/19/16

তুমি শব্দের বয়স

অযত্নে বেড়ে ওঠা তুমি-রোগ কি আজ নতুন?
প্যাপিরাস আবিস্কারের আগেও এ রোগের বয়স কতশত বছর!
যত্নের চেষ্টা রাখতে রাখতে,
তোমার অবহেলার পরশ পেতে পেতে অযত্ন এসে গেল।
পশুপাখিমানুষ সবাই যেমন অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়া নিয়ে বাঁচে,
তুমি আমার তাই।

যদি কিছু থেকে থাকে পরের জনম তবে
তুমি আমার সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া হবে।