১৪ মার্চ ২১৫০
গতকাল একটা চিঠি পাওয়া গেছে মহাকাশ থেকে।
হুবহু তুলে দেওয়া হল।
"হাতে বেশি সময় নেই। মৃত্যু আগতপ্রায়। তাই এই চিঠিটা লিখে যাচ্ছি। কালের গর্ভে হারিয়ে না গেলে কেউ হয়তো পাবে।
আমরা রওয়ানা হয়েছি আজ দেড়মাস হল। এই বছরের মে মাসের কাঠফাটা এক রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে সাইত্রিশ টা পরিবারের মোট দুইশত জন সদস্য আর ষোলজন বিজ্ঞানী st5297 এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই। আমরা যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে আসি, মাত্র পয়তাল্লিশ কোটি লোকের বসবাস ছিল সেখানে। এই দেড় মাসে তা বোধহয় আরো কমে গেছে কয়েক কোটি। খরা, মহামারি আর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত পারমানবিক অস্ত্রের পরবর্তী প্রভাবে আজ সুজলা পৃথিবী ধ্বংসের মুখে।
মানব ইতিহাস আর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য গতবছর অর্থাত্ 2099 সালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাংলাদেশ এস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির(BAS) তত্ত্বাবধানে মোট সাড়ে সতের হাজার মানুষ কে নতুন আবিস্কৃত মনুষ্য বসবাস যোগ্য গ্রহ st5297 তে স্থানান্তর করে নতুন সভ্যতা গড়ে তোলা হবে।
যা সিদ্ধান্ত তাই কাজে রুপ দিতে লেগে যাওয়া হল BAS এর তিন হাজার দক্ষ কর্মী আর শ চারেক রোবট নিয়ে।
ছয় মাসের প্রোজেক্ট। চারটা মহাকাশযান বানাতে হবে যারা প্রত্যেকে মোট ষাট জন যাত্রী বহন করতে পারবে এবং পৃথক ভাবে পৃথিবী থেকে ছেড়ে গেলেও যাতে মহাশূন্যে গিয়ে পরস্পর জোড়া লেগে একসাথে চলতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা হবে।
ছয় মাস যাবার পূর্বেই সব তৈরি করা গেল এবং বেশ কিছু ক্লোনিং সিস্টেম বসানো হল যান গুলোতে যা মাংসের যোগান দেবে এবং অক্সিজেনের জন্য প্রফেসর এস পি এর উদ্ভাবিত এক প্রজাতির উদ্ভিদ রাখা হল যারা সহজেই অক্সিজেন তৈরি করতে পারে। যানে মনুষ্য কর্তৃক নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড কেও বিয়োজিত করে যাতে অক্সিজেন পাওয়া যায় তারও ডিভাইস বসানো হল।
আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই 2100 সাল। BAS সিদ্ধান্ত নিল আগামী বছরের মে তেই লোক পাঠানো হবে। সব রেডি এবার যাদের কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল মহাশূন্যে পাঠানোর জন্য তাদের থেকে সাইত্রিশ টা পরিবারের মোট দুইশত সদস্যকে নির্বাচন করা হল।
সব ঠিকঠাক হওয়ার পর চারটি যানে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র, বিরাট সব যন্ত্রপাতি, নিউক্লিও ব্যাটারি, সৌর প্যানেল, ওজোন থেকে অক্সিজেন ও বিদ্যুত্ তৈরির মেশিনপত্র, খাবার দাবার তোলা হল। এরপর মানুষ। অতঃপর আমরা রওয়ানা হলাম।
st5297 তে পৌছাতে লাগবে দুমাস। দেড়মাস অতিবাহিত হয়েছে। রওয়ানা দেবার একদিন পরেই আমাদের চার যান মিলে যায় এবং মোট দুইশত সতের জন মানুষ একত্রিত হই।
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে দু সপ্তাহ পরই নতুন গ্রহে পৌছতে পারব।
এক সপ্তাহ পরঃ
সম্পূর্ণ অচেনা আর মহাকাশ যান হতে বিচ্ছিন্ন এক টুকরো ফাইবার গ্লাসের কেসিং এ নিজেকে আবিস্কার করলাম । বাকিরা কোথায় ঠিক বুঝতে পারছি না।
তবে বুঝতে পারছি আর সময় নেই। ভাল থেক পৃথিবী।
প্রফেসর ডব্লিউ
স্থানঃ অচেনা ঘোলাটে
বোধহয় ওজোন গ্রহের কাছাকাছি।"