১।
আমার বাবা মাছ ধরার পোঁকা ছিল। এখনো সুযোগ পেলেই মাছ ধরতে যায়। মাঝে মাঝে সুযোগ করে মাছ ধরতে যায়। দাদু খুব রাগ করত। মাছ ধরা দাদুর খুব অপছন্দের ছিল। তার ছেলে হয়ে বাবা মাছ ধরতে যাবে এটা ছিল দাদুর জন্যে রাগ-ক্ষোভ, মাঝে মাঝে অভিমানের কারণ। দাদু বছর পাঁচেক আগে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক চেষ্টার পর মোটামুটি সুস্থ হলেও আগের মত আর রাগারাগি করার শক্তি দাদুর নেই। তারপরও বাবা মাছ ধরতে যায় চুপিচুপি। এমনও হয়েছে বাবা মাছ ধরতে গেছে কিন্তু মাছ আর বাড়ি আনে নি। রাস্তায় কাউকে দিয়ে দিয়েছে। মা-ও কিছুটা দায়ী বটে। বাবা মাছ ধরতে যাক মা কম পছন্দ করে। কে শোনে কার কথা, আজও বাবা মাছ ধরতে গিয়েছিল। নিজে দেখে এসেছি। মাছ পেয়েছিলও, বাড়ি আনে নি। আমাকে বলল আবার ছেড়ে দিয়েছে নদীতে *_*
দাদুর একটা কথা মনে পড়ে। বর্ষার দিন হলেই আমরা লাফাতাম মাছ ধরতে যাব বলে। দাদু হয়ত পাটের আঁশ নিয়ে বসেছে গরুর দড়ি বা গৃহস্থালি কাজের জন্যে দড়ি তৈরি করতে, দড়ি ঘুরিয়ে দেবার জন্যে একজন লোক লাগত। মাঝে মাঝে আমি বা মানিক সে দায়িত্ব পালন করতাম ভাগ করে। মাছ ধরতে যাবার কথা পাড়তেই দাদু বলত,
"কাজ থুয়ে মারে মাছ
বিধি লাগে তার পাছ"।
অর্থাৎ কাজ ফেলে রেখে মাছ ধরতে গেলে ভাগ্যবিধাতা বা সৃষ্টিকর্তা কাজ ফেলে রাখা ব্যক্তির ক্ষতি করে। কুসংস্কার বলি আর যাই বলি না কেন গ্রামের শতভাগ বয়স্ক মানুষ এটা বিশ্বাস করে। আমার ঠাকুমার মুখেও একথা আমি বহুবার শুনেছি।
২।
আজ সারাদিনই আমি মাছ ধরার জন্যে ঘুরে বেড়িয়েছি। প্রথমে গেছি বিলের জল নামার জন্যে খাল আছে একটা তার সুইচ(স্লুইস না কী যেন বলে ঠিক জানি না) গেটের কাছে। চন্দনের সাথে। খেপলা জাল নিয়ে। আমি আর চন্দন। আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই খেপলা জাল ফেলার। চন্দন টুকটাক পারে। ও-ই ভরসা। গিয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য। বিশ জনের বেশি জাল হাতে শখের, পেশাদার মাছ ধরুয়া। কোন মতে একটা খেপ ফেলা হল। নিরাশ হতে হল না। উঠল একটা পুঁটি। বেশ বড়। সবার যেখানে একবারে বিশ ত্রিশটা উঠছে আমাদের একটা ওঠাতেই আমরা খুশি। :-D
আবার জাল ফেলা হল। এবার মাছ বাবাজীরা আমাদের কাঁচকলা দেখাল। পাশ থেকে আমাদের চন্দ্রবদন দেখে এক কাকা মন্তব্য করল আমাদের উচিৎ হবে স্নান করে সুন্দর জামাকাপড় পরে রাস্তায় র্যাম্পওয়াক করা :'(
আতে ঘা লাগল একটু। চলে আসলাম ওখান থেকে। এগিয়ে গিয়ে অনেক কসরত করে আরেকটি মাছ পেলাম। আর এগুনো ঠিক হবেনা বুঝে মানে মানে কেটে পড়লাম *_*
এরপর হাত-পা ধুতে নামলাম রাজুদের পুকুরে। ওখানে দেখি বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে। এক পিচ্চির থেকে ছিপটা চেয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। সবাই পুঁটি পাচ্ছিল, আমি একটা ট্যাংরা পেয়ে নিজের পিঠ চাপড়ে দিলাম খুব :-D কিন্তু মাছটা ছুটে গেল :'(
এরপর আরো দুটো পুঁটি পেয়েছিলাম। সাইজ দেখে আর থাকতে ভাল লাগল না।
দুপুরে আকাশের সাথে এডভেঞ্চারের নাম করে বেরলাম। বাজারে গিয়ে আবার মাথায় ভুত চাপল। বড়শি তৈরির যন্ত্রপাতি কিনে একজনের দিয়ে খাসা একটা বড়শি তৈরি করলাম। বাকি থাকল মাছের খাদ্য আর বড়শির লাঠি। কুমার নদে নেমে গেলাম। ছবি তোলার ফাকে দেখি এক পিচ্চি জলে দাঁড়িয়ে মাছ ধরছে। ওর থেকে আটা নিলাম চেয়ে। আটায় দেখি পিঁপড়ার ডিম দেওয়া। পাশেই পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছিল কিছু লোক। ওখান থেকে পাটকাঠি নিলাম একটা। বড়শি পুরোপুরি তৈরি। একটা নৌকা পেয়ে জলে পা ডুবিয়ে বসে পড়লাম। যা হবার তাই হল। মাছের কোন দেখা নেই। বন্ধু রিপন স্নান করতে এসে আমাকে দেখে অবাক। বলে এভাবে হবে না। বেচারা জলে নেমে সুন্দর করে একটা জায়গা পরিস্কার করে দিল। নৌকা নিয়ে গেলাম সেখানে। ফলাফলে কোন পরিবর্তন নেই। কোন মাছ পেলাম না। রাগ-অভিমানে ফিরছি এমন সময় দেখি বাবা একটা ছোট নৌকায় মাছ ধরছে। আমাকে দেখে বলে বাবা মাছ ধরতে এসেছ বুঝি। :O
আমি কী বলব ভেবে না পেয়ে চলে আসলাম।
রাস্তায় এসে লিজ নেওয়া পুকুর পাড়ে এসে ভাবলাম এখান থেকেই মাছ ধরি কিছু। আবার ভাবলাম না। এভাবে গেল গা আজকের মাছ ধরার কাহিনী। ভাবছি কাল আবার যাব। সব গুছিয়ে, একেবারে প্রস্তুত হয়ে যাব। দেখি মাছের একদিন নাকি আমার যে কয়দিন লাগে *_*
#বাবা খেতে ডাকছে। আজ আর হল না লেখা। দাবা খেলা আর কাব্যর দুষ্টামির কথা না লিখলে অপরাধী হয়ে যাব নিজের কাছে :'(
খেলা যখনই জমে যায় কাব্য এসে একটানে ছত্রভঙ্গ করে দেয় *_*
২৪/০৯/২০১৫
আমার বাবা মাছ ধরার পোঁকা ছিল। এখনো সুযোগ পেলেই মাছ ধরতে যায়। মাঝে মাঝে সুযোগ করে মাছ ধরতে যায়। দাদু খুব রাগ করত। মাছ ধরা দাদুর খুব অপছন্দের ছিল। তার ছেলে হয়ে বাবা মাছ ধরতে যাবে এটা ছিল দাদুর জন্যে রাগ-ক্ষোভ, মাঝে মাঝে অভিমানের কারণ। দাদু বছর পাঁচেক আগে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক চেষ্টার পর মোটামুটি সুস্থ হলেও আগের মত আর রাগারাগি করার শক্তি দাদুর নেই। তারপরও বাবা মাছ ধরতে যায় চুপিচুপি। এমনও হয়েছে বাবা মাছ ধরতে গেছে কিন্তু মাছ আর বাড়ি আনে নি। রাস্তায় কাউকে দিয়ে দিয়েছে। মা-ও কিছুটা দায়ী বটে। বাবা মাছ ধরতে যাক মা কম পছন্দ করে। কে শোনে কার কথা, আজও বাবা মাছ ধরতে গিয়েছিল। নিজে দেখে এসেছি। মাছ পেয়েছিলও, বাড়ি আনে নি। আমাকে বলল আবার ছেড়ে দিয়েছে নদীতে *_*
দাদুর একটা কথা মনে পড়ে। বর্ষার দিন হলেই আমরা লাফাতাম মাছ ধরতে যাব বলে। দাদু হয়ত পাটের আঁশ নিয়ে বসেছে গরুর দড়ি বা গৃহস্থালি কাজের জন্যে দড়ি তৈরি করতে, দড়ি ঘুরিয়ে দেবার জন্যে একজন লোক লাগত। মাঝে মাঝে আমি বা মানিক সে দায়িত্ব পালন করতাম ভাগ করে। মাছ ধরতে যাবার কথা পাড়তেই দাদু বলত,
"কাজ থুয়ে মারে মাছ
বিধি লাগে তার পাছ"।
অর্থাৎ কাজ ফেলে রেখে মাছ ধরতে গেলে ভাগ্যবিধাতা বা সৃষ্টিকর্তা কাজ ফেলে রাখা ব্যক্তির ক্ষতি করে। কুসংস্কার বলি আর যাই বলি না কেন গ্রামের শতভাগ বয়স্ক মানুষ এটা বিশ্বাস করে। আমার ঠাকুমার মুখেও একথা আমি বহুবার শুনেছি।
২।
আজ সারাদিনই আমি মাছ ধরার জন্যে ঘুরে বেড়িয়েছি। প্রথমে গেছি বিলের জল নামার জন্যে খাল আছে একটা তার সুইচ(স্লুইস না কী যেন বলে ঠিক জানি না) গেটের কাছে। চন্দনের সাথে। খেপলা জাল নিয়ে। আমি আর চন্দন। আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই খেপলা জাল ফেলার। চন্দন টুকটাক পারে। ও-ই ভরসা। গিয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য। বিশ জনের বেশি জাল হাতে শখের, পেশাদার মাছ ধরুয়া। কোন মতে একটা খেপ ফেলা হল। নিরাশ হতে হল না। উঠল একটা পুঁটি। বেশ বড়। সবার যেখানে একবারে বিশ ত্রিশটা উঠছে আমাদের একটা ওঠাতেই আমরা খুশি। :-D
আবার জাল ফেলা হল। এবার মাছ বাবাজীরা আমাদের কাঁচকলা দেখাল। পাশ থেকে আমাদের চন্দ্রবদন দেখে এক কাকা মন্তব্য করল আমাদের উচিৎ হবে স্নান করে সুন্দর জামাকাপড় পরে রাস্তায় র্যাম্পওয়াক করা :'(
আতে ঘা লাগল একটু। চলে আসলাম ওখান থেকে। এগিয়ে গিয়ে অনেক কসরত করে আরেকটি মাছ পেলাম। আর এগুনো ঠিক হবেনা বুঝে মানে মানে কেটে পড়লাম *_*
এরপর হাত-পা ধুতে নামলাম রাজুদের পুকুরে। ওখানে দেখি বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে। এক পিচ্চির থেকে ছিপটা চেয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। সবাই পুঁটি পাচ্ছিল, আমি একটা ট্যাংরা পেয়ে নিজের পিঠ চাপড়ে দিলাম খুব :-D কিন্তু মাছটা ছুটে গেল :'(
এরপর আরো দুটো পুঁটি পেয়েছিলাম। সাইজ দেখে আর থাকতে ভাল লাগল না।
দুপুরে আকাশের সাথে এডভেঞ্চারের নাম করে বেরলাম। বাজারে গিয়ে আবার মাথায় ভুত চাপল। বড়শি তৈরির যন্ত্রপাতি কিনে একজনের দিয়ে খাসা একটা বড়শি তৈরি করলাম। বাকি থাকল মাছের খাদ্য আর বড়শির লাঠি। কুমার নদে নেমে গেলাম। ছবি তোলার ফাকে দেখি এক পিচ্চি জলে দাঁড়িয়ে মাছ ধরছে। ওর থেকে আটা নিলাম চেয়ে। আটায় দেখি পিঁপড়ার ডিম দেওয়া। পাশেই পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছিল কিছু লোক। ওখান থেকে পাটকাঠি নিলাম একটা। বড়শি পুরোপুরি তৈরি। একটা নৌকা পেয়ে জলে পা ডুবিয়ে বসে পড়লাম। যা হবার তাই হল। মাছের কোন দেখা নেই। বন্ধু রিপন স্নান করতে এসে আমাকে দেখে অবাক। বলে এভাবে হবে না। বেচারা জলে নেমে সুন্দর করে একটা জায়গা পরিস্কার করে দিল। নৌকা নিয়ে গেলাম সেখানে। ফলাফলে কোন পরিবর্তন নেই। কোন মাছ পেলাম না। রাগ-অভিমানে ফিরছি এমন সময় দেখি বাবা একটা ছোট নৌকায় মাছ ধরছে। আমাকে দেখে বলে বাবা মাছ ধরতে এসেছ বুঝি। :O
আমি কী বলব ভেবে না পেয়ে চলে আসলাম।
রাস্তায় এসে লিজ নেওয়া পুকুর পাড়ে এসে ভাবলাম এখান থেকেই মাছ ধরি কিছু। আবার ভাবলাম না। এভাবে গেল গা আজকের মাছ ধরার কাহিনী। ভাবছি কাল আবার যাব। সব গুছিয়ে, একেবারে প্রস্তুত হয়ে যাব। দেখি মাছের একদিন নাকি আমার যে কয়দিন লাগে *_*
#বাবা খেতে ডাকছে। আজ আর হল না লেখা। দাবা খেলা আর কাব্যর দুষ্টামির কথা না লিখলে অপরাধী হয়ে যাব নিজের কাছে :'(
খেলা যখনই জমে যায় কাব্য এসে একটানে ছত্রভঙ্গ করে দেয় *_*
২৪/০৯/২০১৫
No comments:
Post a Comment