10/5/23

আমার প্রিয় শিক্ষক কারা?

প্রাইমারিতে প্রথম বেতের বাড়ি। অখিল স্যারের কাছে। ক্লাস টুতে থাকতে। এমন ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটেছিল এইট এ উঠে শারিরীক শিক্ষক শুশান্ত স্যারের কাছে। এর মাঝে কেটে গেছে বহু বছর। বেতের বাড়ি খাইনি।


প্রাইমারির নির্মল স্যার। আহ! প্রায়ই বাড়ি বয়ে আসতেন খোঁজখবর নিতে। কাকারা স্কুলে বরাবরের মত ভাল ছাত্র ছিল। স্কুলের জমিও আমাদের দান করা। স্বাভাবিকের চেয়ে তাই একটু বেশি খাতির পেত কাকারা। আমরাও। খাতির চোখে পড়ত না। ভালবাসাটা খাতিরকে ছাপিয়ে যেত সবসময়। নির্মল স্যার একটা ভালবাসা ❤


অরুণ স্যার! একদম সাদামাটা। রাগ খুব তার। একদম সাদা পাঞ্জাবি পরে আসতেন সবসময়। কোনদিন অন্য কোন পোষাকে দেখিনি। গত ছুটিতে দেখা হল। বয়সের ভারে কাতর। বিনাপাণি স্যার( আসলে তিনি ম্যাম। কখনও ম্যাডাম বলা পছন্দ করতেন না৷ বলতেন স্যার বলতে। এই একমাত্র নারী যাকে আমি স্যার ডাকতাম।)। সময়ের কাছে পরাজিত এক ক্যান্সার আক্রান্ত পরাজিত যোদ্ধা। 


সেকেন্ডারিতে পেলাম পিযুশ স্যার। বাচনে, স্টাইলে এবং পড়ানোতে চমৎকার৷ বাংলা পড়াতেন। অশোক স্যার। আমার প্রিয় স্যারদের একজন। এই লোকটা আমাকে এতটা বিশ্বাস করতেন যে সৃজনশীল প্রশ্নের সেট আমাকে খসড়া করে দিতে বলতেন। আহ! আমার কি চমৎকার স্কুলবেলা। হেড স্যার সবসময় আমাকে স্নেহ করতেন। কোনদিন আমার আবদার ফেলেন নি। দেখা হলে আপনাআপনি এঁদের পায়ে আমার হাত চলে যায়। একজন হুজুর ছিলেন। তাঁর ক্লাস পাইনি। আমার নামটা জানতেন। সবসময় সুদীপ্ত বলে ডাকতেন। খুব মজার কিছু ঘটনা আছে স্কুলে। একবার ব্যাকরণের গণপতি স্যারের(একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ❤) আমবাগান থেকে রোজ আম চুরি শুরু করলাম। স্যার স্নেহ করতেন, ভালবাসতেন তাই জেনেও কিছু বলতে পারতেন না। দারুণ এক মারপ্যাঁচ বুদ্ধি পাঁকালেন হুজুর স্যারের সাথে। হুজুর স্যার ডাকলেন৷ গেলে বললেন বাবা সুদীপ্ত তোমাকে একটা কাজ করতে হবে। গণপতি স্যারের আম বাগান থেকে রোজ টিফিন টাইমে আম চুরি হচ্ছে। এই চোরকে ধরার কাজ তোমাকে দিলাম৷ আমি কোনরকমে জ্বি স্যার বলে কেটে পড়লাম। আম চুরি বন্ধ হয়ে গেল। 


মিতা ম্যাম ছিলেন আমাদের সবার প্রিয়। খুব মজা করতেন আমাদের নিয়ে। পড়ালেখার বাইরেরও স্কুলে কে কি করে ম্যামের নখদর্পণে ছিল। একবার একজন সাবেক প্রেমিকা আমায় টিফিন খাইয়ে দিয়েছিল। ম্যাম সে ঘটনাও জেনে ফেলেছেন এবং আমাকে খোঁচা দিয়েছেন৷ সেইসব দিন!


মনে পড়ে দিনেশ সিংহ রায় স্যারের কথা। আজীবন এই লোকটা আমার মস্তিষ্কের মণিকোঠায় আটকে গেছেন। যেন ভাল মানুষ, তেমন সুন্দর পড়াতেন৷ তাকে নিয়ে আমার আলাদা একটা লেখাই আছে। বলে শেষ করা যাবে না। বাংলা পড়াতেন৷ বাংলার প্রতি এই যে আকর্ষণ- তার পেছনে আছেন দিনেশ স্যার। সমীরণ স্যার <3! অল্প কিছুদিনের জন্য পেয়েছিলাম প্রাঞ্জল স্যারকে। দারুণ অঙ্ক পড়াতেন৷ তার লেখা দুটো অঙ্কের সমাধান আজও আমার কাছে রাখা আছে। একজন ভালমানুষ এবং শিক্ষক পেয়েছিলাম৷ গুহিরাম কিস্কু। বাংলা ঠিকমত বলতে পারতেন না। আদিবাসি ছিলেন৷ বহুদিন তিনি ডেকে নিয়েছেন টিফিন টাইমে। একসাথে লাঞ্চ করেছি। প্রাঞ্জল স্যারের সাথে টিফিন টাইমে দাবা খেলার কথা কখনও ভুলবো না। 


একজন প্রাইভেট টিউটর ছিলেন৷ দীপ দা। তার হাতেই আমার অনেক পড়ালেখা শেখা। পড়ালেখা বলতে কিভাবে মজা নিয়ে পড়তে হবে, কিভাবে চাপমুক্ত থাকতে হবে শিখেছিলেন। কিন্তু জীবন করেনি তাকে ক্ষমা হায়!


শঙ্কর স্যার, সঞ্জয় স্যার আর দিবাকর স্যার৷ এনারা কখনও আমাকে বুঝতে দেননি তাদেরকে বিরক্ত করছি। যখন ইচ্ছে পড়তে গেছি। যে কোন ব্যাচের সাথে পড়িয়েছেন৷ কোনদিন টাকাপয়সার কথা বলেননি। শুধু বলেছেন পড়া না পারলে ফোন দিয়ে চলে যেতে। সঞ্জয় স্যার আমার ডিপার্টমেন্টের ছিলেন। ফিজিক্স প্রথম থেকেই ভালবাসতাম। তাই আদর করতেন। পড়তে গিয়ে স্যারের বাসায় কিছু খাইনি এমন দিন খুব কম গেছে। আলাদা করে এক্সাম নিতেন৷ স্যার না থাকলে আমার কপালে শনি ছিল এইচএসসির সময়৷ 


কলেজের ফিজিক্স টিচার রুহুল আমিন স্যার। আমাকে গাধাগরুছাগল এবং তেল কুচকুচে গাধা বলা ছিল তার স্বাভাবিক আচরণ। একটা কথা প্রচলিত ছিল স্যার কারো নাম ধরে ডাকলে সে স্যারের কাছের ছাত্র। একবার তিনি আমার নাম ধরে ডেকেছিলেন। খাতায় আমি তারিখ সহ লিখে রেখেছিলাম৷ এনার মত শিক্ষক আমি আর দুটি পাই নি। আমাদের বিপ্লব স্যার৷ জুওলোজি পড়াতেন৷ আমি ধরে নিয়েছিলাম এই সাবজেক্ট আমি ফেল করব। স্যারের পড়ানো আমাকে ফেল করতে দেয়নি৷ সেরা কিছু সময় কাটিয়েছি স্যারের বাসায় পড়তে গিয়ে৷


বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে পা দিয়ে সব হারিয়ে গেল৷ কে কাকে চেনে কাকে ভালবাসে কিছু বোঝা যায় না৷ এরই মাঝে লোয়েস্ট সিজির এই ছেলেকে কাছে ডাকলেন তিনি৷ আমার এখন অবধি সবচে আপন স্যার৷ যাকে যা ইচ্ছে বলা যায়, আবদার করা যায়৷ মুখের ওপর বলা যায় স্যার এগুলো ভুল৷ তিনি মেনে নেন, ভুল বললে শুধরে দেন৷ কখনোই তাকে তার ভালবাসার বিপরীতে কোন ফলাফল দেখাতে পারিনি৷ একপ্রকার লজ্জাতেই দূরে থাকি৷ ভালবাসা নেবেন স্যার। ক্ষমা করবেন। 


আরও কয়েক হাজার শব্দ লেখা যাবে৷ আমি আর কিছু লিখব না৷ নাম না বলা অনেক স্যার হৃদয়ে জায়গা নিয়েছেন যাদের নাম নিয়েছি তাদের সাথেই। আপনাদের হাতে রচিত সিঁড়ি ধরে ধীর গতিতে আগাচ্ছি৷ হয়তো আলো আসবে একদিন এই আশায়। ভালবাসা রইল আপনাদের জন্য৷


০৫/১০/২০১৯

No comments:

Post a Comment