সে অনেকদিন আগের কথা। দুই গ্রামে দুইটা পাখি বাস করতো। মজার ব্যাপার হল পাখি দুইটা স্কুলে পড়ালেখা করত, একই স্কুলে। মেয়ে পাখিটার বাপ স্কুলের টিচার এবং ছেলে পাখির কাকা এই স্কুলেরই নতুন টিচার হিসেবে জয়েন করে।
একটু বর্তমান থেকে ঘুরে যাই। সংযুক্ত ছবিটা একাকীত্বের চেয়েও বেশি কিছু প্রকাশ করে। ঠিক,,,
একা হয়ে যাও।"
মহাদেব সাহার এই কবিতাংশের মত।
অকা, আবার অতীতে যাওয়া যাক। ছেলে পাখির কাকার কাছে প্রাইভেট পড়ার দরুন মেয়ে পাখির সাথে ছেলে পাখির বেশ ভাব জমে যায়। এভাবে চলতে থাকে। একদিন হঠাৎই তাদের ভালবাসাবাসির সূচনা হয়। সেদিন সময়টা ছিল বিকেলে, একটা এসএমএসের মাধ্যমে। ২০১০ সাল। মার্চ মাস। ৭ তারিখে শুরু, ৯ তারিখে ব্রেকাপ। মেয়ে পাখির বাড়ি জানাজানি হইছে কারণ মেয়ে পাখিদের তখন মোবাইল থাকে না, বাপের মোবাইল দিয়ে এসএমএস করা লাগতো। ছেলে পাখি তো শেষ! আবার ১২ তারিখ থেকে যোগাযোগ শুরু। এপ্রিলে গিয়ে আবার গন্ডগোল। এভাবে চলল ২০১৩ পর্যন্ত। ডিসেম্বরে শেষ দেখা। তারপরও যোগাযোগ ছিল। মন দেওয়া নেওয়ার গল্প, স্বপ্ন দেখানো এবং অর্ধশত চিঠি চালাচালির শেষ হঠাৎ করে হবে ছেলে পাখি জানতো না(তাইতো দেখেন ছবিতে মাথা নিচু করে আছে 😛)।
ছেলে পাখি তখন এডমিশন দেবে। পরদিন ঢাকা ভার্সিটির ডি ইউনিটের এক্সাম। সেই রাতেই ব্রেকাপ এবং কোন ভাবেই মেয়ে পাখির সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এরপর যা ঘটে তা আবার বর্ণনা করবে ছেলে পাখির ব্রেকাপ পরবর্তী 'মানুষ'।
"and miles to go before i sleep,,,,,
9/25/15
একটি পঁচিশে সেপ্টেম্বর
কমলাপুর রেলস্টেশন। রাত আটটা বা নয়টা। সময় দেখার সময় ছিল না। মন ছিল পুরোপুরি বিক্ষিপ্ত। সাড়ে চার বছরের ফুলবাগান এক ঝড়ে ভেঙ্গে গেলে যতটা বিষ্ময় কাজ করার কথা তার চেয়েও বেশি বিষ্মিত ছিল ছেলেটা। সময়ের দিকে খেয়াল করার অবকাশ পায় নি সে।
প্রেমে পড়লে মানুষ পাগল হয়। প্রেম চলাকালীন মানুষ পাগল হয়। সবাই বলে। ছেলেটা বিশ্বাস করত। কারণ নিজেকে সে পাগল হিসেবেই দেখেছে। মেয়েটার প্রেমে পড়ার পর পাগল ছিল সে। প্রেম চলাকালীন পাগল ছিল সে। লোকে আরো বলত প্রেম ভেঙ্গে গেলে মানুষ পাগল হয়। ভয়ানক পাগল। ছেলেটা ঠিক বিশ্বাস করতে চাইত না। বলত ও কখনো ছেড়ে যাবে না। ঠিকই একটা না একটা কারণ খুঁজে নিয়ে পাশে থেকে যাবে। ঠিক যেমন থেকেছে সাড়ে চার বছর। সবাই না হাসলেও কেউ কেউ হাসত। হাসত মেয়েটাও, পরে জানা গেছে যদিও। ছেলেটার এহেন পাগলামী দেখে মেয়েটাও হাসত খুব। আর বলত কখনো ছেড়ে যাবে না। বিশ্বাস পাকাপোক্ত হতে থাকে। আরো একটু শান্তি লাগতে থাকে হৃদয়ে। শরতের আকাশে মেঘের সাথে ওড়ে কিছু সুখ। ছেলে মেয়ে দুটো যেন শরতের কাশফুল হয়ে যায় ক্রমশ।
একদিন হঠাৎ আসে মেসেজটা। সব কিছু শেষ। গত এক বছর ধরে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে মেয়েটা। ছেলেটাকে গুছিয়ে নিতে বলে। ভাল থাকতে বলে। ছেলেটার বিষ্ষয় কাটে না। কাটতে চায় না। আগেও এমন মেসেজ এসেছে সব শেষ বলে। এমন কখনো লাগে নি। আজ যেন কিছু একটা বিষাদ লেগে আছে মেসেজে। পাগল হয়ে যায় ছেলেটা। ফোনের পর ফোন,,,,,,,,
কোন সাড়া নেই।
সাড়া আর থাকবে না এটা বুঝতে পারলে ছেলেটারই উপকার হত। নিজেকে শান্ত করতে পারত। সব কিছু কি আর মেসেজের লেখার মত সহজ হয়? হয় না। ছেলেটা দিশাহারা হয়ে ছুটতে থাকে। কোথায় যাবে জানে না। চলতে চলতে গিয়ে উঠল এক প্লাটফর্মে। না, নামল এক প্লাটফর্ম থেকে। নিচে, রেললাইনের ওপর। ট্রেন আসবে। প্রতারিত হবার চেয়ে মরা ভাল এই ফালতু যুক্তিই তখন তার কাছে ষোনার খনি।
কার জীবনে কখন কী ঘটে কে বলতে পারে। ট্রেনটা চলে যায়। গাইবান্ধার কোন এক পাগল তাকে বাঁচিয়ে দেয় আজকের এই লেখা লেখার জন্যে।
মেয়েটা সুখে আছে। ভাল আছে। থাকার কথা। ছেলেটা ভাল আছে। সুখে নেই। দুঃখেও নেই। শরতের আকাশে আছে। কাশফুলে আছে। শহিদ মিনারের ওয়ালে আছে। :-)"
আবার আসুন একটু বর্তমানে ফিরি। ছেলেটা(পাখি পাখি করতেছিলাম ছবিটার জন্য, নাথিং এলস) এখনও টুকটাক মন খারাপ করে ঢাবির এক্সাম খারাপ দেওয়াতে, কিছু করার ছিল না। এখন পড়ছে একটা ভার্সিটিতে, পছন্দের সাবজেক্টে এবং একটা বিষয়ে সে পৈশাচিক আনন্দ পায়। বলব তার আগে আরেকটু অতীতে যেতে চাই।
২০১৪ তে সেপ্টেম্বরে ব্রেকাপ, খুব কষ্ট। খাওয়া নাওয়া সব বাদ, ঢাকায় বাসায় একা। পড়ালেখায় মন নেই, খাওয়ায় রুচি নেই। পকেটে কিছু টাকা নিয়ে ছয় নাম্বার বাসে উঠে এদিক ওদিক ঘোরে ছেলেটা, ইলেক্ট্রনিকস নিয়ে পড়ে থাকে। এরপর বাড়ি ফিরে আসে। তারই মাঝে আরও কয়েকটা ভার্সিটিতে এক্সাম দেয়। হয়েও যায়। আস্তে আস্তে হতাশা কাটতে থাকে। ততদিন মেয়েটা হয়েছে তার প্রাক্তন! ছেলের ছোটভাই এবং বাবাকে মেয়ের বাড়ি থেকে একদিন কটু কথা বলে, ওই দিনই ছেলেটা সিদ্ধান্ত নেয় আর কোনদিন মনের কোনও কোণায় মেয়েটার জন্য জায়গা থাকবে না এবং থাকেও না। অপমান এবং কটুকথা মেয়ের সামনেই করা হয়েছিল সেদিন সে কোন কথা বলেনি। যাইহেক এরপর মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়।
ছেলেটা তখন নতুন মেসে, ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হবে। মেয়েটা তখন রঙিন স্বপ্নের জাল বুনতে ব্যস্ত। তার যে বিয়ে। বিয়েটা হয়ে গেল।
এরপর কেটে গেল তিনটে বছর। এই বছরের শুরুতে একবার যোগাযোগ করে মেয়েটা এবং ক্ষমা চেয়ে বলে তার বাড়ির লোকেই এখন বলে আগের ছেলেটাই ভাল ছিল। তারা নাকি ভুল করেছে। এইটা শুনে ছেলের মনে পৈশাচিক এক আনন্দ খেলা করে এবং ফোন কেটে দেয়। এরপর আর কখনও যোগাযোগ হয়নি। ছেলেটা আনন্দে আছে। থাকে।
শেষ কথা। এই ছবিটা দেখি আর ভাবি একা থাকলে আপনি মুক্ত স্বাধীন সুখী।
দোকলা থাকলে আপনি বন্দী, পরাধীন এবং ক্ষেত্র বিশেষে অসুখী।
একটু বর্তমান থেকে ঘুরে যাই। সংযুক্ত ছবিটা একাকীত্বের চেয়েও বেশি কিছু প্রকাশ করে। ঠিক,,,
"সেই জনশূন্য নিঃশব্দ দ্বীপের মতো,
নিজের ছায়ার মতো, পদচিহ্নের মতো,
শূন্যতার মতো একা হয়ে যাও।
একা হয়ে যাও এই দীর্ঘশ্বাসের মতোনিজের ছায়ার মতো, পদচিহ্নের মতো,
শূন্যতার মতো একা হয়ে যাও।
একা হয়ে যাও।"
মহাদেব সাহার এই কবিতাংশের মত।
অকা, আবার অতীতে যাওয়া যাক। ছেলে পাখির কাকার কাছে প্রাইভেট পড়ার দরুন মেয়ে পাখির সাথে ছেলে পাখির বেশ ভাব জমে যায়। এভাবে চলতে থাকে। একদিন হঠাৎই তাদের ভালবাসাবাসির সূচনা হয়। সেদিন সময়টা ছিল বিকেলে, একটা এসএমএসের মাধ্যমে। ২০১০ সাল। মার্চ মাস। ৭ তারিখে শুরু, ৯ তারিখে ব্রেকাপ। মেয়ে পাখির বাড়ি জানাজানি হইছে কারণ মেয়ে পাখিদের তখন মোবাইল থাকে না, বাপের মোবাইল দিয়ে এসএমএস করা লাগতো। ছেলে পাখি তো শেষ! আবার ১২ তারিখ থেকে যোগাযোগ শুরু। এপ্রিলে গিয়ে আবার গন্ডগোল। এভাবে চলল ২০১৩ পর্যন্ত। ডিসেম্বরে শেষ দেখা। তারপরও যোগাযোগ ছিল। মন দেওয়া নেওয়ার গল্প, স্বপ্ন দেখানো এবং অর্ধশত চিঠি চালাচালির শেষ হঠাৎ করে হবে ছেলে পাখি জানতো না(তাইতো দেখেন ছবিতে মাথা নিচু করে আছে 😛)।
ছেলে পাখি তখন এডমিশন দেবে। পরদিন ঢাকা ভার্সিটির ডি ইউনিটের এক্সাম। সেই রাতেই ব্রেকাপ এবং কোন ভাবেই মেয়ে পাখির সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এরপর যা ঘটে তা আবার বর্ণনা করবে ছেলে পাখির ব্রেকাপ পরবর্তী 'মানুষ'।
"and miles to go before i sleep,,,,,
9/25/15
একটি পঁচিশে সেপ্টেম্বর
কমলাপুর রেলস্টেশন। রাত আটটা বা নয়টা। সময় দেখার সময় ছিল না। মন ছিল পুরোপুরি বিক্ষিপ্ত। সাড়ে চার বছরের ফুলবাগান এক ঝড়ে ভেঙ্গে গেলে যতটা বিষ্ময় কাজ করার কথা তার চেয়েও বেশি বিষ্মিত ছিল ছেলেটা। সময়ের দিকে খেয়াল করার অবকাশ পায় নি সে।
প্রেমে পড়লে মানুষ পাগল হয়। প্রেম চলাকালীন মানুষ পাগল হয়। সবাই বলে। ছেলেটা বিশ্বাস করত। কারণ নিজেকে সে পাগল হিসেবেই দেখেছে। মেয়েটার প্রেমে পড়ার পর পাগল ছিল সে। প্রেম চলাকালীন পাগল ছিল সে। লোকে আরো বলত প্রেম ভেঙ্গে গেলে মানুষ পাগল হয়। ভয়ানক পাগল। ছেলেটা ঠিক বিশ্বাস করতে চাইত না। বলত ও কখনো ছেড়ে যাবে না। ঠিকই একটা না একটা কারণ খুঁজে নিয়ে পাশে থেকে যাবে। ঠিক যেমন থেকেছে সাড়ে চার বছর। সবাই না হাসলেও কেউ কেউ হাসত। হাসত মেয়েটাও, পরে জানা গেছে যদিও। ছেলেটার এহেন পাগলামী দেখে মেয়েটাও হাসত খুব। আর বলত কখনো ছেড়ে যাবে না। বিশ্বাস পাকাপোক্ত হতে থাকে। আরো একটু শান্তি লাগতে থাকে হৃদয়ে। শরতের আকাশে মেঘের সাথে ওড়ে কিছু সুখ। ছেলে মেয়ে দুটো যেন শরতের কাশফুল হয়ে যায় ক্রমশ।
একদিন হঠাৎ আসে মেসেজটা। সব কিছু শেষ। গত এক বছর ধরে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে মেয়েটা। ছেলেটাকে গুছিয়ে নিতে বলে। ভাল থাকতে বলে। ছেলেটার বিষ্ষয় কাটে না। কাটতে চায় না। আগেও এমন মেসেজ এসেছে সব শেষ বলে। এমন কখনো লাগে নি। আজ যেন কিছু একটা বিষাদ লেগে আছে মেসেজে। পাগল হয়ে যায় ছেলেটা। ফোনের পর ফোন,,,,,,,,
কোন সাড়া নেই।
সাড়া আর থাকবে না এটা বুঝতে পারলে ছেলেটারই উপকার হত। নিজেকে শান্ত করতে পারত। সব কিছু কি আর মেসেজের লেখার মত সহজ হয়? হয় না। ছেলেটা দিশাহারা হয়ে ছুটতে থাকে। কোথায় যাবে জানে না। চলতে চলতে গিয়ে উঠল এক প্লাটফর্মে। না, নামল এক প্লাটফর্ম থেকে। নিচে, রেললাইনের ওপর। ট্রেন আসবে। প্রতারিত হবার চেয়ে মরা ভাল এই ফালতু যুক্তিই তখন তার কাছে ষোনার খনি।
কার জীবনে কখন কী ঘটে কে বলতে পারে। ট্রেনটা চলে যায়। গাইবান্ধার কোন এক পাগল তাকে বাঁচিয়ে দেয় আজকের এই লেখা লেখার জন্যে।
মেয়েটা সুখে আছে। ভাল আছে। থাকার কথা। ছেলেটা ভাল আছে। সুখে নেই। দুঃখেও নেই। শরতের আকাশে আছে। কাশফুলে আছে। শহিদ মিনারের ওয়ালে আছে। :-)"
আবার আসুন একটু বর্তমানে ফিরি। ছেলেটা(পাখি পাখি করতেছিলাম ছবিটার জন্য, নাথিং এলস) এখনও টুকটাক মন খারাপ করে ঢাবির এক্সাম খারাপ দেওয়াতে, কিছু করার ছিল না। এখন পড়ছে একটা ভার্সিটিতে, পছন্দের সাবজেক্টে এবং একটা বিষয়ে সে পৈশাচিক আনন্দ পায়। বলব তার আগে আরেকটু অতীতে যেতে চাই।
২০১৪ তে সেপ্টেম্বরে ব্রেকাপ, খুব কষ্ট। খাওয়া নাওয়া সব বাদ, ঢাকায় বাসায় একা। পড়ালেখায় মন নেই, খাওয়ায় রুচি নেই। পকেটে কিছু টাকা নিয়ে ছয় নাম্বার বাসে উঠে এদিক ওদিক ঘোরে ছেলেটা, ইলেক্ট্রনিকস নিয়ে পড়ে থাকে। এরপর বাড়ি ফিরে আসে। তারই মাঝে আরও কয়েকটা ভার্সিটিতে এক্সাম দেয়। হয়েও যায়। আস্তে আস্তে হতাশা কাটতে থাকে। ততদিন মেয়েটা হয়েছে তার প্রাক্তন! ছেলের ছোটভাই এবং বাবাকে মেয়ের বাড়ি থেকে একদিন কটু কথা বলে, ওই দিনই ছেলেটা সিদ্ধান্ত নেয় আর কোনদিন মনের কোনও কোণায় মেয়েটার জন্য জায়গা থাকবে না এবং থাকেও না। অপমান এবং কটুকথা মেয়ের সামনেই করা হয়েছিল সেদিন সে কোন কথা বলেনি। যাইহেক এরপর মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়।
ছেলেটা তখন নতুন মেসে, ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হবে। মেয়েটা তখন রঙিন স্বপ্নের জাল বুনতে ব্যস্ত। তার যে বিয়ে। বিয়েটা হয়ে গেল।
এরপর কেটে গেল তিনটে বছর। এই বছরের শুরুতে একবার যোগাযোগ করে মেয়েটা এবং ক্ষমা চেয়ে বলে তার বাড়ির লোকেই এখন বলে আগের ছেলেটাই ভাল ছিল। তারা নাকি ভুল করেছে। এইটা শুনে ছেলের মনে পৈশাচিক এক আনন্দ খেলা করে এবং ফোন কেটে দেয়। এরপর আর কখনও যোগাযোগ হয়নি। ছেলেটা আনন্দে আছে। থাকে।
শেষ কথা। এই ছবিটা দেখি আর ভাবি একা থাকলে আপনি মুক্ত স্বাধীন সুখী।
দোকলা থাকলে আপনি বন্দী, পরাধীন এবং ক্ষেত্র বিশেষে অসুখী।
No comments:
Post a Comment